চৌহালির এনায়েতপুর। এখানে কেজির মোড় নামক জনবহুল এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটি সরকারি যাত্রী ছাউনি। একসময় যাত্রীদের আশ্রয় ছিল এই ছাউনি, এখন তা যেন বেসরকারি বাস সংস্থা ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’-এর দখলে বন্দি এক অবিচারিত স্থাপনা। সরকারের অর্থে নির্মিত, জনগণের জন্য নির্ধারিত এই ছাউনিটি আজ হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক লাভের পণ্য। আর প্রশাসন? তারা যেন এক প্রাচীন নাটকের নীরব দর্শক, যারা শুধু দেখে, কিছু বলে না।
২০২৫ সালের ৬ মার্চ বাংলাদেশ নিউজ টুডে-এ প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রথম আলো ফেলে দেয় এই অন্যায়ের উপর। প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো, আলোড়ন তোলে এলাকা জুড়ে। সরাসরি ইঙ্গিত আসে ১ নং সঁদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. মনোয়ারুল ইসলামের ভূমিকা নিয়ে। পরিষদের প্রশাসক মো. তানভীর আহমেদ মজুমদার প্রতিক্রিয়া জানান, আশ্বাস দেন তদন্ত ও ব্যবস্থার। কিন্তু প্রতিশ্রুতির পথ আর বাস্তবতার পথ, এই দেশে প্রায়শই সমান্তরাল নয়।
এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাটি আমলে নেন। তিনি ইউনিয়নের মেম্বার ও সচিবদের নির্দেশ দেন সরকারি স্থাপনায় বেসরকারি কাউন্টার চলবে না। এ ছিল এক প্রশাসনিক উচ্চারণ, দায়িত্ববোধের কণ্ঠস্বর। তিনি তাঁদের জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “জনসেবায় নিয়োজিত থাকা মানেই প্রতিটি পদক্ষেপে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।”
কিন্তু কণ্ঠস্বরটি যেন শূন্যে মিলিয়ে গেল। সময় গড়াল, নির্দেশ থাকল কাগজে, আর ছাউনিটি থাকল দখলে। জনপ্রতিনিধিদের কেউ এগিয়ে এলেন না, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আর দেখা গেল না কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ।
স্থানীয় মানুষেরা প্রতিদিন দেখেন, সরকারি নামে নির্মিত একটি স্থাপনায় কেমন করে চলে ব্যক্তিস্বার্থের কারবার। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন এই নিরবতা কি কেবল দায়িত্বহীনতা, নাকি কোনো অশ্রুত আঁতাতের কুৎসিত ছায়া? প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা আর প্রভাবশালীদের মদদ কি এক অদৃশ্য চুক্তিতে বাঁধা পড়েছে?
সম্প্রতি আবারো ইউএনওকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও, তাঁর পক্ষ থেকেও মেলে না কোনো দৃঢ় প্রতিক্রিয়া। প্রশাসনের এই মৃদু গতি, জনগণের জন্য নির্মিত স্থাপনায় এই অনৈতিক বাণিজ্য, আর তা ঘিরে ক্ষমতার বলয়ে ছড়িয়ে পড়া নীরবতা সব মিলিয়ে এক দুঃখজনক চিত্র রচনা করছে।
চৌহালির মানুষ এখন প্রশ্ন করে সরকারি সম্পদ কি এভাবেই দখলদারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে? প্রশাসনিক নির্দেশনা কি শুধু আনুষ্ঠানিক উচ্চারণেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আর জনপ্রতিনিধিরা কি কেবলই পদে আছেন, দায়িত্বে নন?
এলাকাবাসীর একটাই প্রত্যাশা সরকারি যাত্রী ছাউনিটি যেন ফিরিয়ে আনা হয় তার স্বাভাবিক ও সেবাধর্মী ব্যবহারে। প্রশাসন যদি এখনো না জাগে, তবে এ নিঃশব্দ অন্যায় একদিন প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নেবে সেটি হয়তো আর কাগজে নয়, রাস্তায় হবে।
সাত্তার আব্বাসী
০৫ জুন ২০২৫ইং।
০১৭১১-৪৭৫৭৫২।