দীর্ঘ চার দশক ধরে বন্ধনকে অটুট রেখে কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি তাদের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও এজিএম।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) টিএসসিতে এ উপলক্ষে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় সভাস্থলটি যেন পরিণত হয় এক টুকরো কারমাইকেল কলেজে।
”হৃদয়ের টানে ফিরে আসি বারবার” এই স্লোগানকে ধারণ করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে অনেকের চুল-দাড়ি সাদা হলেও, উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায় তারা যেন আবারও ফিরে যান ছাত্রজীবনে। খোশগল্পে মেতে ওঠেন সবাই।
সকাল ৯:৩০টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, প্রাক্তনদের আগমনে সৃষ্ট আনন্দ-কোলাহলে অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ১১টায়। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে, যা পরিবেশন করেন সংগঠনের আজীবন সদস্য জনাব মো. মনিরুল হক প্রধান। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব সাইদুল আবেদীন ডলার।

সমিতির সভাপতি জনাব প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সঞ্চালনায় ছিলেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি জনাব প্রফেসর ড. রেহেনা খাতুন। তাঁর চমৎকার সঞ্চালনা পুরো অনুষ্ঠানকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়।
কোরআন তেলওয়াতের পর শুরু হয় স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য, যা দীর্ঘসময় ধরে চলে। বক্তারা কেউ কবিতার সুরে, কেউ আবার রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় কারমাইকেল কলেজ জীবনের নানান মজার ঘটনা ও স্মৃতি তুলে ধরেন। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছিল, তারা যেন আবারও ছাত্রজীবনে ফিরে গেছেন। এরপর জুম্মার নামাজ ও দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় পর্বে সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক জনাব রকিবুস সুলতান মানিক। তিনি সমিতির চলমান নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন। সমিতির আয়-ব্যয়ের চিত্র এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা জানান কোষাধ্যক্ষ জনাব অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান জিয়া। তিনি জানান, সমিতির পক্ষ থেকে রংপুরে একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় কারমাইকেল কলেজের সাবেক ভিপি মো. আলাউদ্দিন হাসপাতালের জন্য জমি দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এসময় কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও বক্তব্য রাখেন। তাঁরা কমিটির সদস্য বৃদ্ধিসহ ও নানা বিষয়ে আলোকপাত করেন।
বক্তারা জনাব রকিবুস সুলতান মানিকের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, তাঁর নিবেদিত প্রাণ প্রচেষ্টা ছাড়া আজকের এই বিশাল আয়োজন সফল হতো না। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির ঢাকার মিরপুরে একটি স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে, যার ফ্ল্যাট ক্রয়ে অন্যতম সহযোগিতা করেছিলেন অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান জিয়া।
অনুষ্ঠানে আগামী ২০২৫-২০২৬ সালের জন্য ৩১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনাব প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছেন জনাব রকিবুস সুলতান মানিক। এছাড়াও ১০ জনকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটি নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন জনাব কামরুন্নাহার ডায়না এবং অন্য দুজন কমিশনার। করতালির মাধ্যমে উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান।
সভায় গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনী আনা এবং নতুন কিছু পদ সৃষ্টির কথাও জানানো হয়।
এসময় কারমাইকেল কলেজের বর্তমান একজন শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন এবং কলেজের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি সমিতির সদস্যদের কলেজ পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, নানা সমস্যায় জর্জরিত কলেজটির প্রতি এখন কারও নজর নেই। শিক্ষার্থীদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার বক্তব্য শুনতে দেখা যায় এবং অনেকে কলেজের দুর্দশার কথা শুনে মর্মাহত হন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা কলেজটি পরিদর্শনের আশ্বাস দেন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোঃ নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ সেই সাথে নতুন কমিটিকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে সমিতির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশাল আকৃতির একটি কেক কাটা হয় এবং উপস্থিত সবার মাঝে তা বিতরণ করা হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অনেকে তাদের সন্তানদেরও সঙ্গে এনেছিলেন, যাতে তারা তাদের মা-বাবার ছাত্রজীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো সম্পর্কে জানতে পারে।