শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়কে উল্টোপথে আসা প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত বোরহানউদ্দিন শাহবাজপুর প্রেসক্লাবের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত সভাপতি মনির।। সাধারণ সম্পাদক আঃ মালেক বালিয়াডাঙ্গীতে উপজেলা প্রশাসন কতৃক মেধা যাচাই পুরস্কার বিতরণ সউফো শীতের পিঠা রেসিপি কনটেস্ট ২০২৫ (সিজন -১) অনলাইন রেসিপি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলেন যাঁরা। রূপগঞ্জে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা রূপগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উদযাপন অবশেষে প্রার্থীতা ফিরে পেলেন ওয়াদুদ মাতুব্বর। ৭১’ এর বিজয় তাহিরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠাগার ঘরে রাজনৈতিক সাইনবোর্ড। মধ্য পালশা একতা যুব সংঘ ক্লাবের উদ্যোগে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত

ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ডেঙ্গুর তথ্য নিতে সাংবাদিক মাইদুলকে হেনস্থা, কর্মচারী আপেল ও তিন দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রতিবেদকের নাম / ২৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

মোঃ রফিকুল ইসলাম,
ভূরুঙ্গামারী ( কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক মোঃ মাইদুল ইসলামকে তথ্য সংগ্রহে বাঁধা, মিথ্যা অপবাদ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ মোঃ আরিফুল ইসলাম আপেল ও তিনজন দালালের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে সাংবাদিক মাইদুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে প্রবেশ করলে সেলিম মিয়া নামের এক দালাল তাঁকে বাধা দেয় এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সোহাগ মিয়া, যিনি ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী।

পরে নিচে নেমে আসলে সেখানে জাকির নামক আরেক দালাল যুক্ত হয়। ভিডিওতে দেখা যায় দুইজনে সাংবাদিক মাইদুলকে বাধা প্রদান করে, অশালীন আচরণ করে এবং কর্মচারীদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে— “কেন আসবে এখানে।” এছাড়া হাসপাতালের স্টাফদেরও গালাগালি করে। পরে সাংবাদিক মাইদুল হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাঃ সায়েম না থাকায় কর্মচারীদের অবগত করে চলে আসেন।

পরদিন ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিক মাইদুল হাসপাতালে ভর্তি এক প্রতিবেশীকে দেখতে যান। সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে দেখে তিনি ডেঙ্গু সংক্রান্ত ২১ দিনের ভর্তি রোগীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্বরত এক নার্সের কাছে জানতে চান এবং অবগত করেন যে ডেঙ্গু বিষয়ে ডাঃ সায়েমের নিকট তথ্য চেয়েছিলেন।

নার্স তথ্য দেয়ার সময় ডাঃ সায়েমকে ফোন না করে পরিসংখ্যানবিদ আপেলকে ফোন করলে, আপেল তাঁকে চা খাওয়ার জন্য থাকতে বলেন। কিন্তু মাইদুল চা খাবেন না এবং কষ্ট করে আসতে নিষেধ করেন। তথ্য নেয়ার সময় আপেল নার্সকে কয়েকবার ফোন করে জানতে চান— আছে কিনা, চলে গেছে কি না।

পরে তথ্য সংগ্রহ শেষে নিচে নামার পথে আগের দিন বাধা দেওয়া সেলিমের সঙ্গে হাসপাতালের গেটে দেখা হয় এবং সামনে আপেলের সাথে মুখোমুখি হন। তখন সাংবাদিক মাইদুলকে পুনরায় চা খাওয়ার কথা বললে তিনি না করে প্রশ্ন করেন— হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করা ওই ছেলেটি কে, যে আগের দিন সমস্যা করেছিল?

প্রশ্ন করতেই আপেল উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলেন, “আমার কাছে টাকা চাচ্ছেন কেন, তিন হাজার টাকা চান কেন!” — বলে সেলিমকে ডাকেন। মুহূর্তেই সেলিমসহ এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারে। মুহূর্তেই জাকির ও মেহেদী এসে আপেলের সঙ্গে যোগ দেয়। আপেলের হুকুমে সাংবাদিক মাইদুলকে টেনে-হেঁচড়ে হাসপাতালের পেছনে নেওয়ার চেষ্টা করে ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয়।

সাংবাদিকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে হাসপাতালের কর্মচারী লিমন ব্যাপারীও উপস্থিত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আপেলকে থামাতে বললেও তিনি উল্টো থানায় ফোন করে সাংবাদিককে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন।

পরে ভূরুঙ্গামারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের সামনেই আপেল আবারও দাবি করেন— মাইদুল নাকি তার কাছ থেকে ডেঙ্গু তথ্যের বিনিময়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছিলেন।

সাংবাদিক মাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি রোগী দেখতে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেখতে পাই ও তথ্য নিয়ে যাওয়ার পথে মিথ্যা অপবাদ দেয় ও হেনস্থা করে। এরা একটি সংগঠিত দালালচক্র, যারা হাসপাতালের অনিয়ম ঢাকতে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করেছে। এমনকি হুমকি দিয়েছে— অনেক সাংবাদিকের মতো আমাকেও গায়েব করে দেবে।”

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে রয়েছেন মোঃ শফিকুল ইসলাম, মোঃ সোহাগ মিয়া, মোঃ রুহুল রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন লিমন ব্যাপারী (কর্মচারী, ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স), এবং এসআই এনামুল হক (ভূরুঙ্গামারী থানা)। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ঘটনাটির প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে বলে জানা গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা সংগঠিত হয়ে সাংবাদিক মাইদুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাঁর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ক্ষতি করার হুমকি পাচ্ছেন।

ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট।”

সাংবাদিক মোঃ মাইদুল ইসলাম ভূরুঙ্গামারীর বাসিন্দা। তিনি ভূরুঙ্গামারী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স এবং রংপুর আইন কলেজ থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে অ্যাডভোকেট হওয়ার লক্ষ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘তালাশ বিডি’ ও ‘উলিপুর ডটকম’-এর ভূরুঙ্গামারী প্রতিনিধি, পাশাপাশি ‘হামার কুড়িগ্রাম’-এও নিয়মিত লিখছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক অনিয়ম ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে নির্ভীক সাংবাদিকতা করে আসছেন।

স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, “ডেঙ্গু জ্বরের তথ্যের জন্য কোনো সাংবাদিক টাকা চাইতে পারে— এটা হাস্যকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপবাদ। প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালের দালালচক্র তথ্য প্রকাশ ঠেকাতে এমন নাটক সাজিয়েছে।”

তারা অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং হাসপাতালকে দালালমুক্ত করে জনগণের চিকিৎসা অধিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর