স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের সুড়িগাঁও গ্রামের প্রতিবন্ধী পরিবার ও স্থানীয় চামতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার জমি সংক্রান্ত দুই পক্ষের বিরোধ এখনও শেষ হয়নি। অথচ জেলা আইনগত সহায়তা সংস্থা এ ব্যাপারে লিখিতভাবে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্বাক্ষর নিয়ে বিরোধের স্থায়ী অবসান করে উভয়ের মামলা প্রত্যাহার পর্যন্ত করে দেন। তারপরও চলছে প্রকাশ্য বিরোধ। জানা যায়,উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের চামতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পার্শ্বে প্রতিবন্ধী পরিবার প্রধান জিয়াউল হকের বসতবাড়ী ও রেকর্ডীয় জমি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দ্ব›দ্ব চলে আসছে এই ভূমি নিয়ে। সুড়িগাঁও মৌজার ৯৮ নং জেএলস্থিত ৫৪৮ এস.এ খতিয়ানের ৩৬৩ নং এস.এ দাগে জিয়াউল হকের ক্রয়কৃত ০.৬৫ একর জায়গার মধ্যে ১৫ শতক জায়গা মাদ্রাসার খেলার মাঠের মধ্যে পড়ে যায়। অভিযোগ উঠে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হক উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়াউল হকের জায়গা সেটেলম্যান্ট জরীপের আর.এস/বি.এস পর্সায় মাদ্রাসার নামে রেকর্ড করান। ফলশ্রুতিতে দুপক্ষের মধ্যে চলতে থাকে স্বত্ত মোকদ্দমা। একপর্যায়ে বিনিময় দলিলের মাধ্যমে যার যার সুবিধামত জায়গা বদল করে নেয়ার জন্য এলাকার সালিশী ও লিগ্যাল এইড কমিটি সিদ্বান্ত দেন। দুপক্ষ কাগজেপত্রে উক্ত সিদ্বান্ত মেনেও নেন। সিদ্বান্ত অনুযায়ী বদল করা জায়গায় জিয়াউল হক একটি টিনের ঘর তৈরীর উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের ১লা আগস্ট বুধবার দুপুরে সুরিগাও মৌজার ৩৫৫ নং দাগের ভূমিতে নির্মিত ঐ ঘরটি শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাংচুরসহ লুটতরাজ চালানো হয়। এ ঘটনায় আহত জিয়াউল হকের স্ত্রী গোলাপজান বিবি,পুত্র প্রতিবন্ধী আমিরুল,কন্যা প্রতিবন্ধী সালমা ও রাশিদা বেগমকে আশংকাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৩৮০/৪১৭/১১৪ ধারায় দোয়ারাবাজার থানায় মামলা নং ৯৩ তারিখে ৮/৮/২০১৮ইং দায়ের করা হয়। মাদ্রাসা সুপার আব্দুল হককে প্রধান আসামী করে ঐ মামলায় ১০/১২ জনকে বিবাদী করা হয়। অন্যদিকে ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমিরুল হকের দাপট প্রভাবে মাদ্রাসা সুপার আব্দুল হক জিয়াউল হকের দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী হওয়ার পরও কাউন্টার মামলা নং ৯৪ তারিখ ১০/৮/২০১৮ইং দায়ের করেন ভূক্তভোগী জিয়াউল হক ও তার প্রতিবন্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে। কাউন্টার মিথ্যা মামলায় হয়রানীর একপর্যায়ে অসহায় জিয়াউল হক সুনামগঞ্জ জেলা লিগ্যাল এইডের আশ্রয় নেন। গত ১৬ অক্টোবর ২০১৮খ্রি: তারিখে লি: কেইস নং ৭২/২০১৮ তাং ০২/০৮/২০১৮ইং মোতাবেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মোঃ হাবিবুল্লাহ মাহমুদ,৪টি শর্তে বিরোধীয় পক্ষগনকে আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তি সংক্রান্ত চুক্তিপত্র সম্পাদন করে দেন। শর্তগুলো হচ্ছ (১) ৩৬৩ দাগের যে ৩০ শতক জমি ভূলভাবে মাদ্রাসার নামে অতিরিক্ত লিপিবদ্ধ হয়েছে তা প্রথম পক্ষের উদ্যোগে আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হবে। এবং তাতে কোন পক্ষের আপত্তি থাকবেনা। (২) ৩৬৩ দাগের যে ১৫ শতক জমিতে মাদ্রাসার মাঠ রয়েছে বলে উভয়পক্ষ একমত হয়েছেন সে ১৫ শতকের পরিবর্তে এস.এ ৩৫৫ দাগে ১৫ শতক জমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিনিময় দলিলের মাধ্যমে আগামী শুকনো মৌসুমে জানুয়ারি ২০১৯ইং এর মধ্যে পরিমাপ করত: পরস্পর স্বত্ত দখলদান হস্তান্তর করবেন। (৩) মাদ্রাসা সংলগ্ন ১ম পক্ষের যাবতীয় ভূমি একইসাথে পরিমাপ করত: ১ম পক্ষ তার মালিকানাধীন জমির পরিসীমায় বেড়া প্রদান করবেন। (৪) উভয় পক্ষ নিজ নিজ মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আজোবধি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির উক্ত রায় ও সিদ্বান্ত কার্যকর হয়নি। গত ৩১/০৫/২০২২ইং তারিখে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ সুলেখা দে,আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে বিদ্যমান দেওয়ানি সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহন ও প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ৭নং লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে নির্দেশ দেন। কিন্তু জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সিদ্বান্ত এখনও কার্যকর না হওয়ায় দুপক্ষের মধ্যে জায়গা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। সুড়িগাঁও নিবাসী মৃত আব্দুছ সোবানের পুত্র ভূক্তভোগী জিয়াউল হক বলেন,এস.এ ৩৫৯ নং দাগের মোট ০.৬৫ একর ভূমির ক্রয়সূত্রে মালিক আমি। এর মধ্যে ৩২ শতক ভূমি আমি সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল হকের কাছে বিক্রয় করি। আমার বাকী ৩৩ শতক জায়গার মধ্যে যে ১০ শতক জায়গা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে তাতে আমার পুকুর রয়েছে। বর্তমান আর.এস পর্সায় আমার ৯ শতক জায়গা কম রয়েছে। বিনিময় দলিল সম্পাদন এবং সঠিকভাবে পরিমাপ করে মাদ্রাসা ও আমার দলিল মোতাবেক জায়গা চিহ্নিত করে দিলে আমি উপকৃত হইবো। তিনি এ ব্যাপারে আবারো জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সহযোগীতা কামনা করেছেন।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন,জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পত্রের নির্দেশ মোতাবেক আমি মাদ্রাসায় বসে দুপক্ষের মধ্যে যার যার জায়গা নির্ধারন ও দলিল সম্পাদনেরও উদ্যোগ নেই। পরবর্তীতে উভয়পক্ষ আবার বিরোধে জড়িয়ে পড়ে এবং তারা সমাধানের বিষয়ে অগ্রগতির ব্যাপারে আমাকে কোনকিছু না জানানোর কারণে আমি গায়ে পড়ে আর কোন উদ্যোগ নেইনি। তবে এলাকাবাসী বলেন,অবিলম্বে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির রায় বাস্তবে কার্যকর হলে দুপক্ষের বিরোধের স্থায়ী নিরসন হবে।